মানুষের ভেতরের আয়না চোখ। মুখে না-বলা অনেক কথা চোখ বলে দেয়।
চোখ দেখে রোগ ধ’রা, বহু প্রাচীন রীতি। জন্ডিস, টাইফয়েডের মতো অনেক অ’সুখ, চোখের রং দেখে বলে দেওয়া যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, WHO করোনা ভাইরাসের লক্ষণের যে গাইডলাইন দিয়েছে, সেখানে অনেক উপসর্গের উল্লেখ থাকলেও, করোনায় চোখে যে পরিবর্তন হয়, তার উল্লেখ নেই।
তবে করোনা ভাইরাসআ,ক্রান্তদের চিকিৎসায় জড়িত ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী ও গবেষকদের পর্যবেক্ষণ বলছে, শ`রীরে এই ভাইরাসের সংক্রমণ হলে, ধীরে ধীরে চোখের রং বদলায়। সেই পরিবর্তন দেখেও করোনাআ,ক্রান্তদের চিহ্নিত করা যায়।
এমন অনেকের চোখে এই পরিবর্তন দেখে করোনার পরীক্ষা করতে পাঠানো হয়েছিল। প্রতিটি ক্ষেত্রে রিপোর্ট এসেছে পজিটিভ। এর পরেই ডাক্তার-গবেষকরা র’ক্তচক্ষুর কথা বলছেন।
করোনা সংক্রমণে চোখ লালবর্ণ ধারণ করে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, চোখ তো ঠাণ্ডা লাগলেও লাল হয়। কনজাংটিভিটিস সংক্রমণেও হয়। তাহলে, করোনার সংক্রমণকে আলাদা করে চিহ্নিত করা সম্ভব কী’ করে। জন্ডিস, টাইফয়েড বা অন্যান্য রোগের ক্ষেত্রে চোখের সাদা অংশের রং পরিবর্তন হয়। করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে চোখের বাইরের চারপাশ ক্রমে লাল হয়ে যায়।
ডাক্তার-গবেষকদের ভাষ্য মতে,রো,গীর চোখের দিকে তাকালে মনে হবে, আইশ্যাডো লাগানো রয়েছে। আমেরিকায় করোনায়আ,ক্রান্তদের শুশ্রূষা করতে গিয়ে, এক নার্স প্রথম বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করেন।
চোখের অ্যালার্জি হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন। পরে আরও করোনাআ,ক্রান্তদেরও একই লক্ষণ দেখা যায়। এর পরই কারও মধ্যে এ ধরনের পরিবর্তন লক্ষ্য করলে, করোনার পরীক্ষা করানোর আগেই তাদের আইসোলেশনে পাঠানো হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাস বিভিন্নভাবেরো,গীকে আক্রমণ করতে পারে। একজনের সঙ্গে অ’পরজনের সংক্রমণের ধরন মেলে না। কিন্তু, তারা চোখের বাইরের এই রং পরিবর্তনের ক্ষেত্রে মিল খুঁজে পেয়েছেন।
সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিজারভেশন (সিডিসি) জানাচ্ছে, করোনাভাইরাসের কমন লক্ষণ হল, কফ, জ্বর ও শ্বা’সক’ষ্ট। ক্রমে বুকে চাপ অনুভব করা। বুকে ব্যথা। ঠোঁটে নীলচে ভাব। হু আগে কখনও চোখের এই পরিবর্তনের কথা বলেনি। আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব অফথ্যালমোলজির গবেষকরা জানাচ্ছেন, কংজাংটিভিটিস বা অ্যালার্জির মতোও চোখ লাল হতে পারে।
করোনায় আরও একটি পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে, আমেরিকার Academy of Otolaryngology-র ঘাড়-মাথা সার্জারি বিভাগের ওয়েবসাইটে।আ,ক্রান্তদের উপর পরীক্ষা চালিয়ে গবেষকরা জানাচ্ছেন, করোনা সংক্রমণে ঘ্রাণশক্তির লোপ পায় (anosmia)।
একই সঙ্গে মুখের স্বাদও চলে যায়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় যাকে বলে, dysgeusia । তারা আরও বলছেন, ষাটোর্ধ যাদের বয়স, ইমিউনিটি দুর্বল, ফুসফুস বা হার্টের অ’সুখ রয়েছে, যারা অ’তিরিক্ত মোটা বিএমআই ৪০ এর উপর, অটোইমিউন ডিজঅর্ডার রয়েছে, দেখা যাচ্ছে তাদের মধ্যে এই ভাইরাসে সংক্রমণের ঝুঁ’কি বেশি।
আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব অফথ্যালমোলজির গবেষকরা সম্প্রতি আর একটি পরীক্ষা করে জানিয়েছেন, হাঁচি-কাশি ছাড়াও বডি-ফ্লুইড থেকে করোনার সংক্রমণ ছড়ালেওআ,ক্রান্তের চোখের পানি থেকে ভাইরাস ছাড়ানোর আশ’ঙ্কা নেই।
২০ দিন ধরে নানা সময়েআ,ক্রান্তদের চোখ পানি নিয়ে পরীক্ষা চালিয়ে তাতে ভাইরাস খুঁজে পাননি গবেষকরা। তবে এই মুহূর্তে সবার সাবধান থাকা উচিৎ যে চোখের রঙ পরিবর্তন হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে খেয়াল করা।
ওয়ার্ল্ড ট্রিবিউন